• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

ঐতিহাসিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ সিরাজ লেক

  • প্রকাশিত ২৭ মার্চ ২০২৪

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব দিকের সীমান্ত ঘেঁষা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা। এই এলাকাটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের ৫ নং সাব সেক্টর। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম মৃত্যু বরন করলে এই লেকের পাশেই টিলায় দাফন করা হয় তাকে। তার নামেই নামকরণ করা হয় শহীদ সিরাজলেক।

এখানে রয়েছে ঐতিহাসিক ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত শহীদ সিরাজ লেকসহ মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ কারণেই এখানে প্রতিদিনেই ছুটে আসছে হাজার হাজার পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।

উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ট্যাকেরঘাটে এই লেকটি অফিস আদালতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও স্থানীয় লোকজন ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত পাথর খোয়ারি হিসাবে চিনেন।

কিন্তু সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা,জনতার দাবি ও স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে ২০১৭সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম আনুষ্ঠানিক ভাবেই এই লেকটিকে শহীদ সিরাজ লেক নামকরণ করেন।

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়,সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত এই খোয়ারিটিতে ১৯৪০ সালে চুনাপাথর সংগ্রহ শুরু করে। এখানে চুনাপাথর সংগ্রহ করে জেলার ছাতক উপজেলায় নির্মিত আসাম বাংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় চাহিদা মিটানো হত। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর বিভিন্ন সমস্যা ও ব্যয় বৃদ্ধি দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় এর সকল কার্যক্রম। পরে ১৯৬০ সালে সিমেন্ট ফ্যাক্টরী চালু রাখার জন্য চুনা পাথরের প্রয়োজনে ভূমি জরিপ চালিয়ে সীমান্তবর্তী ট্যাকেরঘাট এলাকায় ৩২৭ একর জায়গায় চুনাপাথরের সন্ধান পায় বিসিআইসি কতৃপক্ষ। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৬ সালে খনিজ পাথর প্রকল্পটি মাইনিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিন পাথর উত্তোলন করা হয়। ১৯৯৬ সালে এই প্রকল্পটি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোয়ারী থেকে চুনাপাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়। এরপর এই কোয়ারীতে পানি জমে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে লেকে পরিণত হয়।

খোঁজ নিয়ে আরও জানাযায়,সীমান্তের টেকেরঘাট খনি প্রকল্প এলাকাটি মুক্তিযোদ্ধা,জনতার দাবি ও স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে ২০১৭সালে শহীদ সিরাজের নামে নামকরণ করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম বিপ্লব। তিনি লেকের চারদিকে ‘শহীদ সিরাজ লেক’ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন এবং পর্যটকদের জন্য ‘শহীদ সিরাজ রেস্ট হাউস’ নির্মাণ করেন। ২০১৮সালে ১৯ নভেম্বর বিটিভির জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি অনুষ্ঠান পরিচালনা হয় শহীদ সিরাজ লেকের দক্ষিণ কোণ থেকে।

এছাড়াও এ উপজেলায় রয়েছে বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন টাংগুয়ার হাওর। রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তর শিমুল বাগান,বাংলার আইফেল টাওয়ার খ্যাত বারেকটিলা,যাদুকাটা নদী,প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানীর হলহলিয়া রাজ বাড়ির ধংবশেষ,তিনটি শুল্ক বন্দর। ফলে সারা বছরেই হাজার হাজার পর্যটকের আগমনে মুখরিত থাকে এসব পর্যটন স্পষ্ট গুলো।

সচেতন মহলে বলছেন,আগত পর্যটকদের জন্য শহীদ সিরাজ লেককে ঘিরে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ আধুনিকায়ন করা খুবেই প্রয়োজন। তাহলে আগামী প্রজন্মসহ এখানে যারাই আসবে মুক্তিযোদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ জাগবে। একেই সাথে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা রৌজ আলী বলেন,শহীদ সিরাজ লেককে আরও আধুনিকায়ন করে দৃষ্টি নন্দন করা হলে এবং যেহেতু এই এলাকাটি মুক্তিযুদ্ধের ৫ নং সাব-সেক্টর ছিল তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ছোট একটি উল্লেখ যোগ্য লেখা সাইনবোর্ড,মুক্তিযোদ্ধ নিয়ে দৃশ্যমান কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হলে পর্যটকদের আগমন বাড়বে,সেই সাথে আগতরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কেও ধারনা নিতে পারবে আগমী প্রজন্ম।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন,শহীদ সিরাজ লেককে আরও আধুনিকায়ন করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads